২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রহস্যময় দেয়ালচিত্র

-

ঢাকার দেয়ালগুলোতে আলোচিত ‘সুবোধ’ সিরিজের পর আবার নতুন দুটি চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে নতুন বার্তা নিয়ে, যা ‘গ্রাফিতি’ হিসেবে পরিচিত। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি নিয়ে ঢাকায় আঁকা হয়েছে নতুন দেয়ালচিত্র। আরেকটি চিত্র ইঙ্গিত করছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তেেপর ওপর। নতুন দেয়ালচিত্র দুটির একটি আঁকা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের দেয়ালে। এতে দেখা যায়, দুই বেণীওয়ালা এক মেয়েশিশু একটা ফাঁসির দড়ি ধরে আছে। ওপরে লাল হরফে লেখা ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট’ বা ধর্ষকের ফাঁসি চাই। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দেয়ালে আঁকা অন্য চিত্রে উপস্থিত একমাত্র চরিত্রের ঠোঁটে আঙুল রাখা। পাশে লেখা, ‘আর কত?’ অর্থাৎ আর কত চুপ থাকবে?
সুবোধ সিরিজের দেয়ালচিত্রগুলোর মতো এই দুটি চিত্রও আঁকা হয়েছে স্টেনসিল ব্যবহার করে। আরেকটি মিল হচ্ছে, সুবোধ সিরিজের মতোই এই চিত্র দুটির আঁকিয়ে কিংবা আঁকিয়েদের কোনো পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার একটা শিল্পিত মাধ্যম হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার দেখা যায়। বিভিন্ন দেশে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোতে গ্রাফিতি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠার নজির আছে। নিকট অতীতে দিল্লির ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, যুক্তরাষ্ট্রে অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন, ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন কিংবা সম্প্রতি যাদবপুরে শিার্থী নিগ্রহের প্রতিবাদে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনেও ছিল গ্রাফিতির উপস্থিতি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গ্রাফিতি আঁকিয়ে ব্যাংসি প্যারিসে এমন ১২টি দেয়ালচিত্র এঁকেছেন; যার মাধ্যমে ইউরোপের বিতর্কিত অভিবাসন ইস্যু, ফ্রান্সে হিজাবের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে কাকলি পদচারী-সেতুর পূর্ব দিকে ‘মাস্টার পিস’ নামের একটি দেয়ালচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা আঁকড়ে থাকা এক কিশোরীর অবয়ব দেখা যায়, যেটাকে আশাবাদের প্রতীক হিসেবে দেখেছিলেন চিত্র সমালোচকেরা। আবার গত বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার দেয়ালে আঁকা সুবোধ কখনো ছিল বাক্সবন্দী সূর্য হাতে পালাতে উদ্যত, কখনো জেলে বন্দী, কখনো হতাশায় নুয়ে পড়া এক মানুষ।
ঢাকার দেয়ালে আঁকা ‘সুবোধ’ সিরিজের দেয়ালচিত্রগুলোর অনুপ্রেরণায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে চিত্রিত করেন একাধিক গ্রাফিতি। এই শিার্থীরা ঢাকার ‘সুবোধ’কে দেখেছেন তাদের দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে। তবে ঢাকার গ্রাফিতি আঁকিয়েরা এখন পর্যন্ত অপ্রকাশ্য ও রহস্যময় হয়ে থাকলেও কলকাতায় যারা সুবোধকে এঁকেছেন, তারা সবাই প্রকাশ্য। যদিও আঁকার ঢঙে রয়েছে পার্থক্য।
সময়টা ‘প’ে যাচ্ছে না সুবোধের। তাই সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তার চিহ্ন রেখে যাচ্ছে নগরের দেয়ালে দেয়ালে। তবে কে এই সুবোধ? কে তাকে পালাতে বলছে? সে কোথায় পালাচ্ছে? এ সবের কোনো উত্তর নেই। জানা যায়নি কোনো হেতু। তবে ‘সুবোধ’ আলোচনা ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ঢাকা শহরের দেয়ালে আঁকা সুবোধ কখনো হাতে বাক্সবন্দী সূর্য নিয়ে পালাতে উদ্যত, কখনো জেলে বন্দী, কখনো হতাশায় ঝুঁঁকে পড়া এক মানুষের প্রতিমূর্তি।


আরো সংবাদ



premium cement